নিজস্ব প্রতিবেদক:
সিলেট ও সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। কারণ আগামী কয়েক ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
অন্যদিকে, দেশের আরও কয়েকটি নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এতে কয়েকটি জেলায় নতুন করে বন্যা দেখা দিতে পারে। পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বৃষ্টিপাতে বন্যায় এরইমধ্যে প্লাবিত হয়েছে সিলেট। গত শুক্রবার (১৪ জুন) থেকে শুরু হওয়া টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে নগর ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির দেখা দেয়। সিলেট নগর ও জেলায় ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। জেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে অনেক উপজেলা। সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সিলেটে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর বুধবার সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, সিলেটে বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সিলেটের তিনটি নদীর ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৬ সেন্টিমিটার ও সিলেট পয়েন্টে ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া, কুশিয়ারা নদীর আমলশীদ পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০০ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার এবং সারি-গোয়াইনের গোয়াইনঘাট পয়েন্টে বিদৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সিলেট নগরের ২৩টি ওয়ার্ডের ৫০,০০০ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আর আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন ২,৫০০ জন মানুষ। জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের ১,৫৪৮ টি গ্রামের ৮ লাখ ২৫ হাজার ২৫৬ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। জেলায় এখন পর্যন্ত ১৭,৪৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছেন। তাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৫৭৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। বহু সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, “মোটামুটি সিলেটের সব জায়গা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। আমাদের সর্বশেষ রির্পোটে ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১৯,৯৪৯ জন মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। সবগুলো আশ্রয়কেন্দ্রেই আমাদের নজরদারি রয়েছে। প্রত্যেক ইউনিয়নেই আমাদের ট্যাগ অফিসার রয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ সবাইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির খুব বেশি উন্নতি হয়নি। পানি অল্প একটু কমলেও আবার বৃষ্টিতে আর কমেনি।” অন্যদিকে, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, বুধবার (১৯ জুন) সকাল ৯টার পর ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের (এফএফডব্লিউসি) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নেত্রকোণা জেলার নদীসংলগ্ন কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এতে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়তে পারে। মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ জেলার মনু-খোয়াই নদী সংশ্লিষ্ট নিম্নাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলার দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীসমূহের পানি বাড়তে পারে। ব্রহ্মপুত্র ও যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আগামী ৭২ ঘণ্টা তা অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সুরমা ছাড়া দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সব প্রধান নদ-নদীর পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে এফএফডব্লিউসি।